সমস্ত লেখাগুলি

অলৌকিক বলে কিছু হয় না -
অশোক সরকার
Nov. 21, 2024 | যুক্তিবাদ | views:979 | likes:0 | share: 0 | comments:0

একটা সময় যুক্তিবাদী মানুষরা যীশুখ্রীষ্টের জীবন ও জীবনী সম্বলিত ধর্ম কাহিনীর উচ্চতর সমালোচনা শুরু ক'রেন। ফরাসি দার্শনিক দেকার্ত বাইবেলের ঈশ্বরকে অস্বীকার ক'রে ঈশ্বরতত্ত্বকে একটি যুক্তিবাদী দর্শনের সমস্যা রূপে চিহ্নিত করেন। যীশুর সব মিরাকেল বা অলৌকিক কার্যকলাপ তিনি যুক্তি বিরুদ্ধ বলে উড়িয়ে দেন।

 তিনি বলেন: “ঈশ্বরকে বাইবেলের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একমাত্র যুক্তিপূর্ণ দার্শনিক মনের মধ্যেই তাকে সন্ধান করতে হবে। এইভাবে মানুষ যখন মননের মাধ্যমে ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য উপলব্ধি করতে পারবে, তখন তারা বাইবেলকে বর্জন করবে।”

ডাচ দার্শনিক স্পিনোজা বলেন: “বাইবেলের সঙ্গে যুক্তি ও দর্শনের কোন মিল নেই, তারা দুটি আলাদা জগতের বিষয়। তাছাড়া বাইবেল, কে বা কারা লিখেছিলেন, কবে লিখেছিল, কেন লিখেছিল? কে বা কারা সবগুলো কাহিনী একসঙ্গে সংকলিত করেছিল, ইত্যাদি প্রশ্ন তুলে তিনি বিশ্বাসী দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেন। প্রকৃতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্পিনোজা বলেন যে, সমস্ত বিশ্ব প্রকৃতিই ঈশ্বর। জীবজগৎ সহ  মহাবিশ্বের সর্বত্র শুধু প্রকৃতি নামক একটি বস্তু বিভিন্ন  রূপে বর্তমান, এবং এই প্রকৃতিই ঈশ্বর।” (এখানে একটা কথা বলে রাখি, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন একমাত্র স্পিনোজার দর্শনকেই বিশ্বাস করতেন। স্পিনোজা কে নিয়ে আমার একটা লেখা আছে। আবার করার ইচ্ছা রইল।) আর এইসব বক্তব্যের জন্য একবার ১৬৫৬ সালে এবং আরেকবার তার মৃত্যুর পরে ১৬৭৮ সালে তাকে ইহুদি ধর্ম থেকে বহিষ্কার করা হয়।

 

সপ্তদশ শতাব্দীতে আর যাদের রচনা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বাইবেলে বিশ্বাসের উপর আঘাত হেনেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন টমাস হবস, জন লক এবং জন মিল্টন।

 ১৮ শতকে ইউরোপে বিশেষকরে ফ্রান্সে, যে জ্ঞানবাদী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, দিদেরো, হেলভেশিয়াস, ভলতেয়ার প্রমূখ সেই আন্দোলনের তাত্ত্বিক নেতারা বাইবেল তথা খ্রিস্ট ধর্মকে যুক্তি এবং ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের সাহায্যে নস্যাৎ করবার চেষ্টা করেন। তাছাড়া ইংল্যান্ডের ডেভিড হিউম তাঁর যুক্তিবাদ ও প্রয়োগবাদের মাধ্যমে শাস্ত্রীয় খ্রিস্টধর্মের ভিত নাড়িয়ে দেন।  জার্মানিতে ইমানুয়েল কান্ট তাঁর Critigue of pure reason গ্রন্থে দেখান যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ নেই।

 এইসব যুক্তিবাদী প্রবাহের ফলে উনিশ শতকে যীশুর জীবন কাহিনীকে “নিউ টেস্টামেন্ট” এ আগের বর্ণিত সমস্ত অলৌকিকতা থেকে মুক্ত করে, একজন আদর্শ লৌকিক মানুষের জীবন হিসাবে দেখাবার চেষ্টা করা হয়েছে।

 পলাশ (Paulus) ১৮২৮ সালে একটি যিশুচরিত রচনা করেন। যাতে তিনি যীশুর অলৌকিক জন্ম, জীবনের সমস্ত অলৌকিক কার্যকলাপ এবং পুনরুজ্জীবিত হয়ে কবর থেকে উঠে আসার কাহিনী কে অসত্য এবং অবিশ্বাস্য বলে ঘোষণা করেন। 

আরেকটি বিখ্যাত উদাহরণ রেনান বা রঁন্যার তাঁর life of Jesus বইতে, তিনি একইভাবে সমস্ত অলৌকিকতা বর্জন করে, জিশুকে একজন সাধারন কিন্তু আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেছেন।

এভাবেই খ্রিস্টধর্ম তাদের অলৌকিকতা বর্জিত ধর্মকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মে এটা মনে হয় কোনদিন সম্ভব নয়।

কৃষ্ণের জন্ম হয়েছে এক বিরাট অলৌকিকতার মাধ্যমে যা কোনদিন সম্ভব নয়। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসীরা তা অন্ধের মত বিশ্বাস করে। অবশ্য বিশ্বাস না করে কোনো উপায়ও নেই। অলৌকিকতায় অবিশ্বাস করলে, কৃষ্ণকে নিয়ে লেখা সমস্ত পৌরাণিক কাহিনী গুলি যে কল্পকাহিনী তা প্রমাণ হয়ে যায়।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933